যখন বিশ্বজগত নিমজ্জিত ছিল অন্ধোকারে, সেই অন্ধকার বিদুরিত করে আর্বিভাব হয়েছিলেন আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:)।আসলে তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশ্ববাসীর জন্য অশেষ নেয়ামত।অন্ধকার দুর করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন আলোর পথ।কিন্তু সেই আলো আজ নিভু নিভু হয়ে বিশ্ব আজ অন্ধকারের দিকে আগাচ্ছে। এখন আমাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে কিভাবে এবং কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি বিশ্বকে আলোকিত করেছিলেন।কারন হযরত মালেক (র:) বলেছেন ,এই উম্মতের সংশোধন হবেনা যতখন পর্যন্ত তাদের পর্ববর্তী অনুসরন না করবে।আমাদের নবী সর্বপ্রথম হেদায়েতের মেহনতের জন্য মসজিদকে নির্বাচন করলেন।এবং সকল সাহাবীকে মসজিদের সাথে জোড়ালেন । কারন মসজিদ হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখানে ইচ্ছে করলেও অন্যায় করা যায় না।তাই মসজিদ হয়ে উঠেছিল পরিপূর্ন হেদায়াতের নূর।যত অন্যায় করেই হোক মানুষ যখন মসজিদে আসত, কেউই হেদায়াত থেকে বন্চিত হতনা । কারন যারা মসজিদে মেহনত করতেন, তারা ছিলেন মেহনত থেকে বিনিময় নেয়ামুক্ত। তাদের মেহনতের মুল উদেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি, ফলে যে আসত মসজিদে সেই হেদায়াত নিয়ে বাড়ি ফিরত । এমনকি একশত খুন করেও।সাহাবাকেরাম তথা পরবর্তি জামানায়ও যখন কোন অমুসলিম তাদের কাছ আসত তাদেরকে মসজিদের সাথে জুড়াতেন । এবং তাদের সামনে নিজেদের আমল পেশ করতেন।তাদের আমল দেখেই কোন প্রকার দাওয়াত ছারাই তারা মুসলমান হয়ে যেতেন। তাদের একটাই দাওয়াত ছিল, তোমরা আমাদের মত হয়ে যাও।তখনই তারা মুসলিম হয়ে যেতেন।তাদের এত মজবুত হেদায়াতের মুল চালিকাশক্তি ছিল তাদের সব আমলের মুল খোদার সন্তুষ্টি এবং মাখলুক থেকে বেনিয়াজ। মাখলুকের কাছে যাওয়ার কথা তারা চিন্তাও করতেন না।সাহাবাকেরামদের রসূল (স:) এভাবেই তৈরি করেছিলেন।একবার কোন এক সাহাবীকে রসূল (স:) এক এলাকার জন্য দ্বীন শিখানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন তখন ঐ এলাকার লোকজন তাকে একটি বল্লম হাদিয়া দিয়েছিলেন সাথে সাথে তিনি উহা রসূল(স:) কাছে নিয়ে আসলেন। রসূল (স:) বললেন, যদি তুমি আগুনের বর্ষা হাসরের দিন নিতে চায় তবে গ্রহন কর।এসম্পর্কে সূরা ইয়াসীনে মহান আল্লাহ তায়ালার ইরসাদ তোমরা ঐ ব্যাক্তির কথাকে কেন শুন না যারা তার বিনিময়ে তোমার কাছে কিছুই চায় না।
সমস্ত আমলের মুল কেন্দ্রবিন্দু মসজিদ হওয়াতে মানুষ ইচ্ছে করলেও কোন গুনা করার সাহস হত না। সাহবায়ে কেরাম এমন ছিলেন যে গুনা করার কল্পনাও তাদের আসত না।যতদিন মসজিদ ছিল দ্বীনের কেন্দ্রবিন্দু মানুষের আমল ছিল জীবিত।হযরত সালমান ফারসী (রা:) কে যখন সিরিয়ার গভর্নর করে পাঠানো হয়েছিল, হযরত আবু দারদা (রা:) তাকে অসিয়ত করেছিলেন আপনি অধিকাংশ সময় মসজিদে অবস্থান করবেন কারন আমি রসূল (স) এর কাছ থেকে শুনেছি যারা বেশী সময় মসজিদে থাকে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন , তাদের পুলসীরতের রাস্তা সহজ করে দিবেন।সাহাবাকেরাম (রা:) দের মসজিদের গুরুত্ব কতটুকু তা বুঝা যায় তাদের অসিয়ত দেখে।দেশের গর্ভনরকে উপদেশ দিচ্ছেন মসজিদে থাকার অথচ তার থাকার কথা রাজপ্রসাদে।
কিন্তু কালের পরিক্রমায় মসজিদ ভিত্তিক এই হেদায়াতের মেহনতটা দুভাগে ভিবক্ত হয়ে যায় ( আবুল হাসান নদভী (র:), দ্বীনি দাওয়াত) । একটা হল মাদ্রাসা অন্যটি হল খানকাহ।এই ভাগের ফলে মসজিদ হয়ে গেল ইট পাথরের তৈরি ইমারত যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পর তালাে । এটা এমন তালা যে একজন পথচারী পর্যন্ত নামাজ পরার সুযোগ পায় না।হেদায়াতের মেহনত তো দুরের কথা।মাদ্রাসায় তৈরি হল আলেম যারা এলেমের জোরে সাধারন মানুষ থেকে নিজেকে রাখলেন দুরে।যে এলেমের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কল্যানসাধন সেই এলেম হয়ে গেল তথাকথিত সাধারন শিক্ষার ন্যায়।অন্যদিকে খানকাহ হয়ে গেল এলেমশূন্য জ্ঞানবর্হিভূত খাহেসাৎপূর্ন আমল যেটা তাদেরকে নিয়ে গেছে আল্লাহ থেকে বহু দুরে।
অনেক বিজ্ঞ আলেম বিভিন্ন সময় এই দুই জিনিসকে একত্র করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু সফল হয়েছেন কম। যে কয়জন সফলতার মুখ দেখেছেন তাদের মধ্যে হযরত মাওলানা ইলিয়াস (র:) অন্যতম। তিনি তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা ও খানকাহ উভয় ধারাকে মসজিদমুখী করতে সফল হয়েছিলেন।তিনি এই ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামদের সামনে নিয়ে এসেছিলেন যার ফলস্রুতিতে ঐ মেহনত যেটা করে সাহাবীরা সফল হয়েছিলেন তা পূনরায় জীবিত হল।দীর্ঘ ১০০ বছর যাবত এই মেহনতের দ্বারা মানুষ মসজিদে থেকে হেদায়াতের নূর হাসিল করতে ছিল।যেখানে ছিল আলেম এবং সাধারন মুসলমান উভয়ের সংমিশ্রন।ফলে উভয়ই এখান থেকে হেদায়াতের নূর হাসিল করতে পারত।
কিন্তু আজ ঐ সম্প্রদায় যারা মসজিদ ভিত্তিক সাহাবাদের মেহনতকে ভাগ করেছিল, তারা নতুন করে জেগে উঠেছে। মসজিদের হেদায়াতের মেহনতকে ব্যাক্তিসার্থে ব্যাবহারের জন্য মসজিদ থেকে বের করে নিতে চাইছে। জানি না তাদের কি উদ্দেশ্য। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন ।
No comments:
Post a Comment